এই সমাজে ভালো কিছু করতে গেলেও মাঝে মাঝে খুব বিপদে পড়তে হয়,
কিছু মানুষ থাকবে ঠিক যারা আপনার অজস্র ভাল কাজকে পা মাড়িয়ে নষ্ট করতে চাইবে।
পারভেজ হাসান, যার সাথে পরিচয় আর বন্ধুত্বের অনেক বছর হয়ে গেলো।
একটা সময় চায়ের দোকানে কাজ করা ছেলেটা আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ফ্রিলান্সিং করা শুরু করলো নিজের জীবনকে বদলাবে বলে।
এর মধ্যে একটা সময় ২০১৬ তে ওর সাথে আমার ফেসবুকে বন্ধুত্ব। আমার আবৃত্তি শুনে এড পাঠিয়েছিলো। তারপর টুকটাক কথাবার্তা।
একবার ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আনিস ভাই আমাকে একটা ভাল বই সাজেস্ট করেন তো, আমি বললাম – ছবির দেশে কবিতার দেশে।
সেই সময় বইটার প্রতি চুড়ান্ত মুগ্ধতায় আমি বুৃঁদ হয়ে ছিলাম।
এরপর দিন দেখলাম সেই বইটা কিনে ও পড়া শুরু করলো। আমি যখন ঢাকা যেতাম প্রায়ই ও দেখা করতে চলে আসতো হোটেলে।
তখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছিলো ওর। আমরা খুব আড্ডা দিতাম রাত জেগে জেগে। একবার শাহবাগে
রাস্তার পাশে বসে বসে ও বলছিলো আমাকে- আনিস ভাই একদিন আমি আমার নিজের গল্প বলবো মানুষকে।
সেদিন সব মানুষ আমাকে শুনবে! খুব মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ওর গল্পগুলো আর বলেছিলাম আমরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
কিন্তু কখনো ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সব সত্য হয়ে উঠবে, মানবিক মানুষ হিসেবে এভাবে ও মানুষের একান্ত কাছের মানুষ হয়ে উঠবে।
ও প্রায়ই নিজের জন্মদিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় সমাজের পথশিশু আর গরিব মানুষদের খাওয়াতো নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে।
যেসব দেখে আমিও অনুপ্রাণিত হতাম খুব।
একদিন হুট করে দেখলাম রাস্তায় অসহায় অসুস্থ মাকে একটা ছোট্ট শিশু মাথায় পানি ঢালছে এমন একটা ভিডিও ভাইরাল হলো ফেসবুকে।
যে ভিডিওটা মানুষের সমবেদনায় অশ্রুসিক্ত হয়েছিলো। পারভেজ ছিলো সেই নেপথ্যের কারিগর, যে অসহায়ত্বের ছবি মানু্ষের কাছে পৌছে দিয়েছিলো।
সেই অসহায় মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেছিলো, যার দায়িত্ব নিয়েছিলো সে।
সেই অসহায় মা ও তার পরিবার পারভেজের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের সহায়তায় তাদের হারিয়ে যাওয়া ভিটেমাটি ফিরে পেয়েছিলো।
আমি দূর থেকে ওর এসব মানবিক কাজগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখতাম৷ একটা মানুষের কতখানি পজেটিভ এনার্জি থাকলে এভাবে একটা অসহায় মানুষের দায়িত্ব নিয়ে তার চুড়ান্ত ব্যবস্থা করা যায়!
তারপর করোনা কালীন সময়ে যেভাবে অসহায় মানুষের কাছে ও মানুষের পাশে দাড়িয়েছে, সে কথা সবাই জানে।
সাতক্ষীরায় বন্যার্থ মানুষের পাশে থেকে কিভাবে ও খাবার দিয়ে পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে সেসব ভাবতে গেলে কেবল অবাক হতে হয় আর শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।
দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে নিজের জায়গা থেকে পারভেজ মানুষের জন্য দাড়িয়েছে বারবার। আজ সেই পথশিশু মারুফের পাশে দাড়াতে গিয়ে পারভেজকে বিভিন্ন বিতর্কের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ভাবতে খারাপ লাগে কেউ ভাল কাজ করলে কিভাবে আমরা তাকে নিচে নামাবো তার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকি।
অথচ দেশ বিদেশ থেকে পারভেজের মানবিক কাজের জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ এসেছে, কিন্তু দেশের
সাধারণ মানুষের জন্য নিজের জায়গা থেকে কিছু করার যে স্বপ্ন সে দেখতে তা থেকে তাকে কখনো পিছু হটতে দেখিনি। যেটা
পারভেজ আমাকে বারবার বলতো।
পারভেজ হাসান জীবনের কঠিনতম সংগ্রাম দেখে আসা মানুষ, সে নিজের জীবনকে নিয়ে যদি কেবল ভাবতো হয়তো তাকে আমরা কখনো খুঁজে পেতাম না।
তাকে আমরা পেয়েছি অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে মানবতার কবি হিসেবে, কারন সে নিজের জীবনকে কখনোই ভুলে যায় নি।
ভুলে যায় নি পড়াশোনার পাঠ ছেড়ে জীবনের প্রয়োজনে ছোট্ট বয়সে সেই চায়ের দোকানে কাজ করার জীবন। – এমডি আনিসুল ইসলাম
নিউজ ডেস্ক – বাংলাকণ্ঠ২৪.কম